১.১ ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ ও আর্থিক ঘটনা চিহ্নিতকরণ Analysis of Events and Identification of Monetary Events
একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন অনেক ঘটনা ঘটে থাকে। যেমন : পণ্য ক্রয়, বিক্রয়, কর্মচারী নিয়োগ, বেতন প্রদান, দেনা-পাওনা নিষ্পত্তি, কর্মচারীর অসুস্থতা ইত্যাদি। ব্যবসায়ের মালিকের ব্যক্তিগত জীবনেও অনেক ঘটনা ঘটে থাকে। যেমন— ছেলের স্কুলের বেতন প্রদান, আয়কর প্রদান, নিকট আত্মীয়ের অসুস্থতা, আনন্দভ্রমণ ইত্যাদি। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ঘটনাগুলো হতে পারে আর্থিক বা অনার্থিক। আর্থিক ঘটনা অর্থের সাথে সম্পর্কিত এবং ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটায়। অনার্থিক ঘটনার সাথে অর্থের কোনো সম্পর্ক নেই। যেমন— দুর্ঘটনায় কর্মচারীর আত্মীয় আহত হলো। অনার্থিক ঘটনায় ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থার কোনো পরিবর্তনও হয় না। আর্থিক ঘটনাগুলোকেই মূলত লেনদেন হিসেবে গণ্য করা হয়। এসব লেনদেন বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। যেমন— অভ্যন্তরীণ লেনদেন, বাহ্যিক লেনদেন, নগদ লেনদেন, অনগদ লেনদেন, দৃশ্যমান লেনদেন, অদৃশ্যমান লেনদেন ইত্যাদি। এসব লেনদেন থেকে হিসাববিজ্ঞান তথ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্য ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক পক্ষকে সরবরাহ করা হয়।
১.১.১ আর্থিক ঘটনা (Monetary Events) জনাব রহমান সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে ব্যবসায় শুরু করবেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি ৫০,০০০ টাকা মূলধন বিনিয়োগ করে ব্যবসায় শুরু করলেন। মি. রহমানের চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় করার সিদ্ধান্তটি তার জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তবে এক্ষেত্রে তার আর্থিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু ৫০,০০০ টাকা মূলধন বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। পাশাপাশি ঘটনাটিকে অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপ করা যাচ্ছে। অর্থাৎ কোনো একটি ঘটনার সাথে আর্থিক সংশ্লিষ্টতা থাকতেও পারে, আবার নাও থাকতে পারে। তাই বলা যায়, ৫০,০০০ টাকা মূলধন বিনিয়োগ ঘটনাটি একটি আর্থিক ঘটনা। অন্যদিকে, চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় শুরুর সিদ্ধান্ত কোনো আর্থিক ঘটনা নয়। সর্বোপরি যে ঘটনা অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযোগ্য এবং ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় তাকে আর্থিক ঘটনা বলে অভিহিত করা হয়। আর্থিক ঘটনার অপরিহার্য শর্ত হলো: (১) অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযোগ্য এবং (২) আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন। তাই আর্থিক ঘটনাগুলো অর্থের মূল্যে অর্থাৎ টাকা, ডলার ইত্যাদিতে পরিমাপযোগ্য হতে হবে এবং সেগুলো দ্বারা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হতে হবে। যেমন: ব্যবসায়ের জন্য পণ্য ক্রয়-বিক্রয়, শ্রমিকদের মজুরি প্রদান, বেতন প্রদান, ব্যাংকে টাকা জমা, ব্যাংক থেকে উত্তোলন ইত্যাদি ।
১.১.২ অনার্থিক ঘটনা (Non-Monetary Events)
আমাদের জীবনে প্রতিনিয়ত অনেক ধরনের ঘটনা ঘটে এবং সেগুলোর সবই যে আর্থিক ঘটনা- তা কিন্তু নয়। আমাদের জীবনে এমন অনেক ঘটনা থাকে যা অর্থের অঙ্কে পরিমাপ করা যায় না, যদিও তা আমাদের কাছে মহামূল্যবান। যেমন- বাবা মায়ের আশীর্বাদ ও ভালোবাসা। যেমন- আসিফের ব্যবসায় উদ্যোগের কথা শুনে আসিফের মা বাবা তাকে আশীর্বাদ করলেন। এগুলো আসিফের জন্য মহামূল্যবান ঘটনা। কিন্তু যেহেতু এগুলো অর্থের অঙ্কে পরিমাপযোগ্য নয় এবং আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় না- তাই এগুলোকে বলা হয় অনার্থিক ঘটনা।
সুতরাং, যেসব ঘটনা অর্থের সাথে সম্পর্কিত নয় এবং ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় না তাকে অনার্থিক ঘটনা বলে। কোন ঘটনা তখনই অনার্থিক ঘটনা বলে গণ্য হবে যখন তার নিম্নলিখিত দুটি
বৈশিষ্ট্য থাকবে না। যথা-
১. অর্থের অঙ্কে পরিমাপযোগ্য। ২. আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন।
যেমন, আসিফের বন্ধু আসিফকে এসএমএস করে শুভেচ্ছা জানিয়েছে, এটি আসিফের জন্য অনেক বড় ঘটনা হতে পারে। কিন্তু যেহেতু এটি অর্থের অঙ্কে পরিমাপযোগ্য নয় এবং আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় না, সুতরাং এটি অনার্থিক ঘটনা। পণ্য ক্রয়ের ফরমায়েশ, কর্মচারী নিয়োগ, কারো মৃত্যু ইত্যাদি অনার্থিক ঘটনা।
১.১.৩ আর্থিক ও অনার্থিক ঘটনার পার্থক্য (Difference between Monetary
Events and Non-Monetary Events) উপরের আলোচনা থেকে এটা সহজেই বোঝা যায়।
যে, আর্থিক ও অনার্থিক ঘটনার মধ্যে পার্থক্য দুটি
প্রশ্নের মাধ্যমে বের করা সম্ভব। যথা-
১. ঘটনাটি অর্থের অঙ্কে পরিমাপযোগ্য কি না ।
২. ঘটনাটি আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় কি
না। এই দুটি প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে সেটি আর্থিক ঘটনা আর যদি না হয় তাহলে সেটি অনার্থিক ঘটনা। অর্থের অঙ্কে পরিমাপযোগ্য না হলে কোনো ঘটনা আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারে না। সুতরাং, অর্থের অঙ্কে পরিমাপযোগ্যতাই কোন ঘটনা আর্থিক না অনার্থিক, সেটা বিবেচনার প্রধান মাপকাঠি।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, স্কয়ার গ্রুপ পূর্বাচলে ১০ কাঠা জমি ৩০,০০,০০০ টাকা দিয়ে কিনলো এটি আর্থিক ঘটনা। কারণ এটি অর্থের অঙ্কে পরিমাপযোগ্য এবং এতে স্কয়ার গ্রুপের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু, স্কয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরী মারা গেলেন- এটি স্কয়ার গ্রুপের জন্য অনেক বড় ঘটনা, তবে তা অনার্থিক ঘটনা। কারণ এ ঘটনা আর্থিক মূল্যে পরিমাপ করা যায় না।
১.১.৪ লেনদেনের শ্রেণিবিভাগ (Classification of Transaction )
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে দৈনন্দিন অসংখ্য ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার কিছু আর্থিক ঘটনা এবং কিছু অনার্থিক ঘটনা। আর্থিক ঘটনা তথা অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযোগ্য ও আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় এমন ঘটনাই হলো লেনদেন। লেনদেনের প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য, সীমাবদ্ধতা ও ব্যবসায়ের সার্বিক অবস্থার ভিত্তিতে লেনদেনের শ্রেণিবিভাগ নিম্নরূপ :
উদ্দেশ্যভিত্তিক লেনদেন (Transactions based on oobjectivbjective): লেনদেনের উদ্দেশ্যের ওপর ভিত্তি। করে লেনদেনসমূহ তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
১. ব্যবসায়িক লেনদেন (Business transactions) মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পণ্য বা সেবা ক্রয়-বিক্রয় সম্পর্কিত ঘটনাকে ব্যবসায়িক লেনদেন বলে। যেমন : পণ্য বা সেবা ক্রয়-বিক্রয়, বেতন প্রদান,ভাড়া প্রদান ইত্যাদি
২. অব্যবসায়ী লেনদেন (Non-business transactions) : মুনাফা অর্জনের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়, এমনলেনদেনকে অব্যবসায়ী লেনদেন বলে। যেমন: মসজিদে দান, গরিবকে ভিক্ষা প্রদান ইত্যাদি।
প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক লেনদেন (Transactions based on Organization) : প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক লেনদেনগুলোকে দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
১. অভ্যন্তরীণ লেনদেন (Internal transactions) : যেসব আর্থিক ঘটনা তৃতীয় পক্ষের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয় বরং প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নীতি ও সিদ্ধান্তের কারণে সৃষ্ট, তাকে অভ্যন্তরীণ লেনদেন বলে। যেমন: স্থায়ী সম্পদের অবচয় / অবলোপন, ব্যবসায়ের বিভিন্ন তহবিলে স্থানান্তর, ক্রয়কৃত পণ্য মনিহারি হিসেবে ব্যবহার ইত্যাদি।
২. বাহ্যিক লেনদেন (External transactions) : প্রতিষ্ঠানের বাইরের বা তৃতীয় পক্ষের সাথে সংঘটিত লেনদেনকে বাহ্যিক লেনদেন বলে। যেমন : পণ্য ক্রয়-বিক্রয়, ঋণ গ্রহণ, কর্মচারীর বেতন প্রদান ইত্যাদি।
গ. অর্থ আদান-প্রদান ভিত্তিক লেনদেন (Transactions based on monetary terms ) : অর্থ আদান- প্রদানের ভিত্তিতে লেনদেনকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :
নগদ লেনদেন (Cash transactions ) : যেসব লেনদেন সংঘটিত হওয়ার ফলে প্রতিষ্ঠানের নগদ অর্থের পরিবর্তন ঘটে, তাকে নগদ লেনদেন বলে। যেমন: নগদে আসবাবপত্র ক্রয়, নগদে মাল বিক্রয় ইত্যাদি। তবে হিসাববিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে নগদ বলতে ব্যাংকে জমা, মুদ্রা ও কাগজি টাকাকে বোঝায়।
ধারে লেনদেন (Credit transactions) : পণ্যদ্রব্য, সেবা ও সম্পদ বাকিতে ক্রয়-বিক্রয় করাকে ধারে লেনদেন বলে। যেমন: ধারে পণ্য ক্রয়, ধারে পণ্য বিক্রয়, ধারে আসবাবপত্র ক্রয় ইত্যাদি।
অনগদ লেনদেন (Non-cash transactions ) : যে লেনদেনের ফলে নগদ অর্থের আদান-প্রদান হয় না এবং ভবিষ্যতেও স্বাভাবিকভাবে কোন প্রকার নগদ প্রাপ্তি বা প্রদান হবে না তাকে অনগদ লেনদেন বলে। যেমন: স্থায়ী সম্পদের অবচয়, সুনাম/ ইজারা সম্পদের অবলোপন, সম্পদ বিক্রয়ের ক্ষতি ইত্যাদি।
ঘ. দৃশ্যমানতা ভিত্তিক লেনদেন (Transactions based on visibility): দৃশ্যমানতার ভিত্তিতে লেনদেনসমূহকে দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা
১. দৃশ্যমান লেনদেন (Visible transactions) : যেসব লেনদেন চোখে দেখা যায়, তাকে দৃশ্যমান লেনদেন বলে। যেমন : পণ্য ক্রয়, বেতন প্রদান, ভাড়া প্রদান ইত্যাদি। অদৃশ্যমান লেনদেন (Invisible transactions) যেসব লেনদেন চোখে দেখা যায় না, তাকে অদৃশ্যমান লেনদেন বলে। যেমন: স্থায়ী সম্পত্তির অবচয়, সুনাম ব্রুয়, ইজারা সম্পদের অবলোপন ইত্যাদি।
উপযোগিতা ভিত্তিক লেনদেন (Transactions based on utility) উপযোগিতার ভিত্তিতে লেনদেনকে দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা
১. মূলধন জাতীয় লেনদেন (Capital transactions ) : যেসব লেনদেনের দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল বিদ্যমান সেসব লেনদেনকে মূলধন জাতীয় লেনদেন বলে। মূলধন জাতীয় লেনদেনের উপযোগিতা একাধিক বছর বিদ্যমান থাকে। যেমন: ভূমি ক্রয়, যন্ত্রপাতি ক্রয়, সুনাম ব্রুয়, যন্ত্রপাতির সংস্থাপন ব্যয় ইত্যাদি ।
২. মুনাফা জাতীয় লেনদেন (Revenue transactions) : যেসব লেনদেনের স্বল্পমেয়াদি ফলাফল বিদ্যমান সেসব লেনদেনকে মুনাফা জাতীয় লেনদেন বলে। মুনাফা জাতীয় লেনদেনের উপযোগিতা একটি আর্থিক বছরের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। যেমন: ভাড়া প্রদান, বিনিয়োগের সুদ, পণ্য ক্রয়, বাটা প্রদান ইত্যাদি। তাই বলা যায়, লেনদেনসমূহকে তাদের ধরন ও বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।
১.১.৫ হিসাববিজ্ঞান তথ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা (Concept of Accounting Information Systems)
হিসাববিজ্ঞানকে তথ্য ব্যবস্থা (Information systems) হিসেবে অভিহিত করা হয়। ব্যবসায়ের হিসাব বিভাগ প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কার্যাবলি সংক্রান্ত যেসব বিবরণী প্রস্তুত করে এবং যথাযথভাবে প্রকাশ করে তাকে হিসাব তথ্য বলে। প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কার্যের সামগ্রিক চিত্র আর্থিক বিবরণীর মাধ্যমে ব্যবসায়ের সাথে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের কাছে তুলে ধরা হয়। পক্ষগুলো হিসাব তথ্য ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। হিসাব তথ্যের ব্যবহারকারী পক্ষসমূহকে নিচে ছকের মাধ্যমে দেখানো হলো :
অভ্যন্তরীণ ব্যবহারকারী (Internal Users): যেসব ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানের ভিতরে অবস্থান করে তাদেরকে অভ্যন্তরীণ ব্যবহারকারী বলে। অভ্যন্তরীণ ব্যবহারকারীরা প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহনে হিসাব তথ্য ব্যবহার করে। যেমন— মালিক, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষক ও হিসাব সংরক্ষণ বিভাগ ইত্যাদি।
১. মালিক পক্ষ (Proprietor): মুনাফা অর্জনই ব্যবসায়ের মুখ্য উদ্দেশ্য। মালিক পক্ষ তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থের ওপর অর্জিত মুনাফার হার ও তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থের নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্যাদি জানতে আগ্রহী। হিসাব সংক্রান্ত তথ্যাদি থেকে তারা এ সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করতে পারে।
২. ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (Management Authority): ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য বিভিন্ন ধরনের আর্থিক তথ্যের প্রয়োজন হয়। এসব তথ্য ব্যবস্থাপকগণকে বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা ও বাজেট প্রণয়নে সাহায্য করে থাকে।
৩. অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষক (Internal Auditor): অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে হিসাববিজ্ঞানের বিভিন্ন তথ্য ব্যবহার করে থাকেন।
৪. হিসাব সংরক্ষণ বিভাগ (Accounts Department): হিসাব সংরক্ষণ বিভাগ হিসাব তথ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহারকারী বিভাগ হিসেবে কাজ করে থাকে।
বাহ্যিক ব্যবহারকারী (External Users): হিসাব তথ্যের বাহ্যিক ব্যবহারকারীরা প্রতিষ্ঠানের বাইরে অবস্থান করে। এসব ব্যবহারকারীরা প্রতিষ্ঠানটি লাভজনক কি না তা জানার জন্য হিসাব তথ্য ব্যবহার করে। যেমন— দেনাদার, পাওনাদার, বিনিয়োগকারী, ভোক্তা, সরকার, গবেষক, ঋণদানকারী, বাহ্যিক নিরীক্ষক, কর কর্তৃপক্ষ এবং স্টক এক্সচেঞ্জ ইত্যাদি।
১. সরকার (Government): সরকার প্রতিষ্ঠানের আয়, বিক্রয় ইত্যাদির ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিভিন্ন প্রকার করারোপ করে থাকে। হিসাব তথ্য সরকারকে বিভিন্ন ধরনের করারোপে সাহায্য করে থাকে। ২. ঋণদানকারী (Lender): অতিরিক্ত অর্থ সংগ্রহের জন্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ঋণদাতার ওপর নির্ভর করে। ঋণদাতা ঋণদানের পূর্বে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিবরণী পরীক্ষা করে ঋণ পরিশোধ সক্ষমতা যাচাই করে দেখতে চান।
৩. বিনিয়োগকারী (Investors): বিনিয়োগকারীগণ কোনো প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের পূর্বে ওই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিবরণী ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিনিয়োগ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেন।
৪. ভোক্তা (Customers): ভোক্তা স্বার্থ সঠিকভাবে রক্ষিত হয়েছে কি না তা জানার জন্য ভোক্তাগণ হিসাব তথ্য ব্যবহার করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের পণ্যটি মানসম্মত এবং ন্যায্যমূল্যের কি না তা জানার জন্য ভোক্তা হিসাব তথ্য ব্যবহার করে।
৫. গবেষক (Researchers): প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিবরণী ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতিচ্ছবি। তাই গবেষকগণ
হিসাব সংক্রান্ত তথ্য ব্যবহার করে গবেষণার মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ের মান উন্নয়নে সাহায্য করে থাকে।
৬. বণিক সমিতি (Chamber of Commerce): বণিক সমিতি হিসাব তথ্য ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা জানতে পারে। সমিতির সদস্যদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য হিসাববিজ্ঞান তথ্য ব্যবহার করে। আবার হিসাব তথ্য ব্যবহারের মাধ্যমে বণিক সমিতির চাঁদা নির্ধারণ ও চাঁদা আদায়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়।
৭. জনগণ (General Public): সমাজের জনগণ প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা জানার জন্য হিসাব তথ্য
ব্যবহার করে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে কি না এবং অদক্ষ পরিচালনার জন্য দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে কি না ইত্যাদি বিশ্লেষণের জন্য জনসাধারণ হিসাব তথ্য ব্যবহার করে।
৮. পাওনাদার (Creditors): ধারে পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে পাওনাদার সৃষ্টি হয়। পাওনাদার ধারে পণ্য বিক্রয় করবে কি না সে সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে প্রতিষ্ঠানের হিসাবপত্র পরীক্ষা করেন।
৯. বাহ্যিক নিরীক্ষক (External Auditor) : প্রতিষ্ঠানের হিসাবপত্র যথাযথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে হিসাবে ভুল ও জালিয়াতি উদ্ঘাটন করা এবং ভবিষ্যতে ভুলত্রুটি নিবারণের পরামর্শ দেওয়া হলো বাহ্যিক নিরীক্ষকের দায়িত্ব। এসব কার্যসম্পাদনের জন্য বাহ্যিক নিরীক্ষকের প্রয়োজন হিসাব সংক্রান্ত তথ্য।
১০. স্টক এক্সচেঞ্জ (Stock Exchange): পুঁজিবাজারের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হিসেবে স্টক এক্সচেঞ্জ পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য এবং যেকোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা জানার জন্য হিসাব তথ্য ব্যবহার করতে পারে।
হিসাব তথ্যের উপর্যুক্ত ব্যবহারকারী পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উভয় ব্যবহারকারীর কাছে হিসাব তথ্যের ব্যবহার ও উপযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে সব ব্যবহারকারীই তার অবস্থানে থেকে এবং তার প্রয়োজন মতো তথ্য ব্যবহার করে।